এনজিও সংস্থা সুশীলনের মাঠকর্মী আবুল কাশেম কর্তৃক যৌন হয়রানি ও কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় নারী কর্মীকে চাকুরি থেকে ছাটাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে ওই নারী কর্মী।
অভিযোগে প্রকাশ, সুশীলন (ইএফএসএন-৪) প্রকল্পের আওতাধীন হলদিয়াপালং ১নং ওয়ার্ডের মাঠকর্মী আবুল কাশেম একই প্রকল্পের নারীকর্মী সিডিও রোমানা আক্তারকে বেশ কিছুদিন ধরে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে উক্ত্যক্ত করে আসছিল। এছাড়াও গভীর রাতে উদোম গায়ে ভিডিও কল দিয়ে যৌন হয়রানি করে। কারণে-অকারণে হাত ধরে টানাটানি করত। সম্মানের কথা ভেবে সহপাঠিদের বিষয়টি জানালেও ইতিপূর্বে আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করিনি।
রোমানার অভিযোগে আরো প্রকাশ কাশেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় কৌশলে ৩ মাসের বেতন আটকে দেয়। এছাড়াও ২৭ আগস্ট হলদিয়াপালং মরিচ্যা বাজারের পেছনে শেড ঘরে এসে খারাপ প্রস্তাব দেয়। এতেও রাজি না হওয়ায় টানা-হেচড়া করে শালীনতা হানির চেষ্টা করে এবং চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দিয়ে চলে যায়। যার ফলে ২৮ আগস্ট কোন কারণ ছাড়া সম্পুর্ণ বেআইনী ভাবে আমার নামে অব্যহতি ছাড়পত্র ইস্যু করে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবুল কাশেম বলেন, সুশীলনে চাকুরীকালীন রোমানা আকতার এর বিরুদ্ধে অর্থ আতœসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। যার কারণে তার বিরুদ্ধে অফিসিয়ালি পদক্ষেপ নিলে সে আমার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করে।
অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি সত্য নয় দাবী করে রোমানা বলেন, উপকারভোগী নিজেরাই আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। আমরা কেবল তাদের সহায়তা করি। মাঠ জরিপ করলে এর সত্যতা মিলবে। তাছাড়া সংস্থাটি আমাকে ক্লিয়ারেন্স ছাড়পত্রও দিয়েছে।
খোঁজ নিলে সুশীলনের প্রাক্তন মাঠকর্মী সুবোধ বিশ্বাস বলেন, মাঠকর্মী কিংবা সিডিও রোমানা কর্তৃক অর্থের নয়-ছয় হওয়ার কোন সুযোগ নেই। কারণ টাকা আদান-প্রদান করে স্ব-স্ব সমিতির সভাপতি/সম্পাদক।
তিনি এও বলেন, এনজিও সুশীলন স্টাফদের ঠিক মতো বেতন দেয় না। কারো কোন অনিয়মের বিষয়ে কথা বললে চাকুরি থেকে ছাটাই করা হয়। পাশাপাশি নারী কর্মীদের যৌন হয়রানির বিষয়টি মিথ্যে নয় বলে তিনি জানান।
উপকারভোগী ও পশ্চিম মরিচ্যা বকুল দলের সভাপতি রোজিনা আকতার জানিয়েছেন, রোমানা আক্তার টাকা আত্মসাত করেনি। আবুল কাশেম তাকে বিভিন্ন উক্ত্যক্ত করার বিষয়টি আমরা জেনেছি। একই ধরণের কথা বলেন, ওই এলাকার বেলী দলের সেক্রেটারী আবুল কালামের স্ত্রী শাহীনা আকতার।
জানতে চাইলে সুশীলনের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আনোয়ার হোসাইন বলেছেন, রোমানার অভিযোগ মিথ্যা অভিযোগ হতে পারে। কারণ সে এধরণের কোন অভিযোগ করেনি। তবে আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দিলে তাকে তিন মাসের বেতন দিয়ে দেওয়া হবে।
রোমানা আকতারকে তার স্বাক্ষরিত ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ের ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সুশীলন এর নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেছেন, রোমানা আকতার ইতোপূর্বে নুরুল ইসলাম নামে সুশীলনের উচ্চ পর্যায়ের একজন পরিচালকের বিরুদ্ধে প্রমাণ সহকারে অভিযোগ দিয়েছিল সাথে সাথে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। এখন পর্যন্ত আবুল কাশেম কর্তৃক কু-প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে উপকারভোগীদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাতের কারণে রোমানাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে।
তিনি এও বলেছেন, সুশীলন যে কোন অনিয়ম, দূর্নীতি কিংবা যৌন হয়রানির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, সুশীলনের একজন নারী কর্মীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি ওই নারী কর্মীকে ২/৩ মাসের বেতন বকেয়া রেখে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে । তার বেতন আদায়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পাঠকের মতামত