২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণ পরবর্তীতে বাংলাদেশকে যে চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করতে হবে, তার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে সরকার। কমিটির কাজে সহায়তার জন্য গঠিত বিষয়ভিত্তিক ৭টি সাব-কমিটির অন্যতম হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক সাব-কমিটি।
শনিবার এই সাব-কমিটির উদ্যোগে একটি জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সাব-কমিটি স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের বেলায় সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গৃহীতব্য কার্যক্রম সম্পর্কে যে খসড়া সুপারিশমালা প্রণয়ন করেছে, তা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিকট উপস্থাপন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
অংশীজনদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন এবং রপ্তানিমূখী তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য রাখেন। বিশেষজ্ঞ গবেষক হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন ও গবেষণা সংস্থা পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাহিদী সাত্তার আলোচনা করেন।
প্যানেল আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
জাতীয় কর্মশালায় মূল সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন সাব-কমিটির অধীনে গঠিত তিনটি স্টাডি গ্রুপের তিন আহ্বায়ক। কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান ও পদ্ধতি সংস্কার বিষয়ে উপস্থাপনা করেন এনবিআর সদস্য (কর নীতি) ড. সামস উদ্দিন আহমেদ, ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে উপস্থাপনা করেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদর্ সাদিক এবং রপ্তানি প্রণোদনা বিষয়ে উপস্থাপনা করেন অর্থ বিভাগের মনিটরিং সেলের মহাপরিচালক আরফিন আরা বেগম।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর, বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য সুবিধা হারাবে এবং রপ্তানি পণ্যের সক্ষমতার হ্রাস ঘটবে। তাই রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) অথবা প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) সম্পাদন করতে হবে। এরপর বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একইসাথে রপ্তানিতে বর্তমানে প্রদত্ত নগদ প্রণোদনা ও ভর্তুকির মধ্যে যেগুলো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, সেগুলো ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে তার পরিবর্তে বিকল্প উপায়ে রপ্তানিকে উৎসাহিত করার পন্থা উদ্ভাবন করার প্রয়োজন।
কর্মশালায় ‘কর সংক্রান্ত বিধি-বিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ তাদের উপস্থাপনায় কর ব্যয় সংক্রান্ত গবেষণা সম্পাদনের মাধ্যমে কর অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের ব্যাপ্তি বৃদ্ধির উপরও বিশেষ জোর দেওয়া হয়। রাজস্ব আহরণ সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের যেমন- নতুন কাস্টমস আইন ও নতুন আয়কর আইনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়াও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন চুক্তি অনুসারে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ করা ও পন্য খালাস দ্রুততর করার জন্য কর্মপদ্ধতি আধুনিকায়নের সুপারিশ করা হয়।
‘ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ যে সকল সুপারিশ উপস্থাপন করে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে আরোপিত কাস্টমস শুল্ক ডব্লিউটিওর বাউন্ড ডিউটি সীমা অতিক্রম করেছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে শুল্ক হার সীমার মধ্যে নিয়ে আসা। এছাড়া যেহেতু ন্যুনতম আমদানি মূল্য ডব্লিউটিও এগ্রিমেন্ট অন কাস্টমস ভ্যালিুয়েশন ব্যবস্থা এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, সেকারণে আলোচ্য ন্যুনতম আমদানি মূল্যকে পর্যায়ক্রমে ফেইজ-আউট করা এবং পর্যায়ক্রমে আমদানি পর্যায়ে প্রযোজ্য প্যারা-ট্যারিফ এবং সম্পূরক শুল্ক হ্রাস করা।
সাবসিডি বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ তাদের উপস্থাপনায় উল্লেখ করেছে যে, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বর্তমানে নগদ সহায়তা প্রদান করতে কোন অসুবিধা না হলেও উত্তরণ পরবর্তীতে শিল্প পণ্যের রপ্তানির ক্ষেত্রে তা প্রদান করা যাবে না। এছাড়াও বর্তমানে রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা প্রাপ্ত খাতসমূহে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের যে শর্ত রয়েছে তা বাদ দিতে হবে। স্টাডি গ্রুপ রপ্তানি প্রণোদনা প্রদান করে না- এমন একটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের রপ্তানি চিত্রের তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখেছে যে, রপ্তানিতে নগদ সহায়তা না থাকলে দীর্ঘ মেয়াদে নেতিবাচক প্রভাবের মাত্রা কম হবে। তবে, যেহেতু নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, সে কারণে বিকল্প কি ব্যবস্থা বা কার্যক্রম গ্রহণ করা যায়, তা এ স্টাডি গ্রুপ পর্যালোচনা করে দেখছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন চেম্বারের সদস্য ও খাতের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। তারা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পথ মসৃন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রপ্তানিকারক, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের ও গবেষকদের বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ জরুরি। বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ‘অভ্যন্তরীন রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ সাব-কমিটির গৃহীতব্য কার্যক্রম বিষয়ক সুপারিশমালা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কর্মশালার অংশীজনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রকাশিত:
সেপ্টেম্বর ৩, ২০২২ ৭:৩৬ এএম
, আপডেট:
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ ৭:৩৬ এএম
বিশেষ প্রতিনিধি। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালিভানের ফোনালাপ ...
পাঠকের মতামত