হাইব্রিড ধান চাষে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের হাতছানি দিচ্ছে। গত বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে। কৃষক হাইব্রিড ধানের অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন।তারা জেলার খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। আগামী বছর এ জেলায় হাইব্রিড ধানের আবাদ আরো বৃদ্ধিপাবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইঙ্গিত দিয়েছে।
গোপালগঞ্জে মতো বাংলাদেশের সব জেলায় হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধি করা গেলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানগেছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ জেলা গর্বিত গোপালগঞ্জ। এ জেলা নিম্ন সমভূমি ও বিল অধ্যুষিত । এ জেলায় নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চল, উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি আছে। বর্ষাকালে গোপালগঞ্জের অধিকাংশ জমি পানিতে প্লাবিত হয়।পানিতে টইটম্বুর বিলের শাপলা-শালুক, কলমি-কমল আর দাম-দলে অপূর্ব শোভা ধারণ করলেও ফসল থাকে কম। চাষিরা এ সময়ে উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে এবং ঘেরের পাড়ে ফসল চাষ করেন। শীতকালে এ জেলায় ফসলের সমারোহ সকলকে অবাক করে দেয় শীতকালে প্রায় সকল জমি চাষের আওতায় আসে। এ জেলায় ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি রয়েছে । এর মধ্যে চাষযোগ্য জমি ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৪৪০ হেক্টর। বোরো ধান জেলার প্রধান ফসল। এ জেলায় প্রায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয় ।এর মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা হাইব্রিড ধানের চাষ করেন। সারাদেশে যেখানে বোরো ধানের শতকরা ২৫ ভাগ হাইব্রিড সেখানে গোপালগঞ্জে শতকরা ৭২ ভাগ। গোপালগঞ্জে কৃষকরা ইনব্রিড উফশী ধান যেখানে হেক্টর প্রতি (চালে) ৩.৩৪ মেট্রিক টন ফলন পান, সেখানে হাইব্রিড ফলে ৪.৯৭ মেট্রিক টন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলতলী গ্রামের কৃষক রইচ উকিল বলেন,হাইব্রিড ধানের উচ্চ উৎপাদনশীলতা রয়েছে। তাই আমরা হাইব্রিড চাষে বেশি আগ্রহী । এ ধান চাষে কৃষি বিভাগের কর্মীরা আমাদের প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেন। প্রণোদনার মাধ্যমে বীজ দিয়ে সহায়তা করেন। এছাড়া তারা বীজ ও সার আমাদের হাতের নাগালে সহজলভ্য করে দেন। এছাড়া কৃষি কর্মকর্তারা আমাদের এ ধান আবাদে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতি শতক জমিতে হাইব্রিড ধান এক মণ ফলে । অন্যান্য ধানের তুলনায় হাইব্রিড ধানের ফলন বেশি বলেই আমরা হাইব্রিড ধান ফলাতে উৎসাহ বোধ করি ।আমাদের দেখাদেখি প্রতিবেশি কৃষকরাও প্রতি বছর হাইব্রিড ধানের আবাদ বৃদ্ধি করছেন।
গোপালগঞ্জ শহর সংলগ্ন রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক শ্রীবাস বাইন বলেন, হাইব্রিড ধান মূলত দুই ধরনের। মোটা ও চিকন। তবে কতকগুলো চিকন হাইব্রিড ধান সুগন্ধিযুক্ত। এ গুলোর দাম বেশি। হাইব্রিড ধান খেতে ইনব্রিড ধনের মতো সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। হাইব্রিড ধান চাষ করে আমরা নিজেরা খাই এবং অতিরিক্ত ধান বিক্রি করে লাভবান হই।হাইব্রিড ধান চাষ খুবই লাভজনক। তাই গত ২০ বছর ধরে হাইব্রিড ধানের আবাদ করছি।
কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনসহ বাংলাদেশের প্রায় ২০টি কোম্পানি এ জেলায় গত মৌসুমে ৫০ নামের প্রায় ১০০০ টন হাইব্রিড ধানের বীজ বিক্রয় করেছে। আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মীরা বেরো মৌসুমের আগেই বীজ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধির সাথে নিজের চাহিদা নিয়েকথা বলেন। ভালো বীজ যাতে ন্যায্য মূল্যে কৃষকরা কিনতে পারেন সেজন্য নজরদারিও আমরা করেছি। বোরো মৌসুমে ব্যবহারের জন্য প্রয়েজনীয় সারের চাহিদা বছর শুরুর আগেই আমরা কৃষি বিভাগ নির্ধারণ করে বরাদ্দের জন্য সরকারকে জানানো হয়। ভর্তুকি মূল্যে সার ওয়ার্ড পর্যায়ে খুচরা ডিলারদের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। গোপালগঞ্জের নিচু জমিতে জল থাকতেই ধান লাগানো হয়।খালের পানিতে লো-লিফট পাম্প দ্বারা অথবা জোয়া রের পানিতে সেচ দেওয়া হয়।এছাড়াও গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে ও সেচ দেওয়া হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ গোপালগঞ্জের বিলের মাটিতে হাইব্রিড ধান বাম্পার ফলন দেয়।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, গত মৌসুমে গোপালগঞ্জ জেলার ৮০ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হযয়েছিলো । মোট ধান উৎপাদন হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ২২০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লক্ষ ৯০ হাজার মেট্রিক টন হাইব্রিড ধান, যা বোরোধানের শতকরা ৭৫ ভাগ। এ জেলায় প্রতিবছর হাইব্রিড ধানের চাষ বাড়ছে, উৎপাদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম জমিতে বেশি ফসল উৎপাদন করে উন্নয়নের যে কৌশলের নির্দেশনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিয়ে ছিলেন। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে জাতির পিতার পূণ্য জন্মভূমি গোপালগঞ্জের কৃষক ও কৃষি কর্মীরা বোরো জমিতে হাইব্রিড ধান প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফলকাম হয়েছেন। সারাদেশে হাইব্রিড ধানের চাষ বাড়লে কৃষি উৎপাদনের যুগান্তকারী ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে চীনের মতো কুশলতা দেখাবে। বিশ্বে চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সম্মানিত হবে।
প্রকাশিত:
সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২ ৬:২০ এএম
প্রতিনিধি। রামু সেনানিবাসে যথাযথ মর্যাদায় সশস্ত্র বাহিনী দিবস উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ...
পাঠকের মতামত