জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নানা দিক, ভাষা আন্দোলন, ৬ দফা, ৬৯-এর গণআন্দোলন, ৭০-এর নির্বাচন, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিব নগর সরকার, মুক্তিযুদ্ধ ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের নানা ইতিহাস নিয়ে সাজানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু রেল জাদুঘর। ট্রেনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত একটি বগিকে সুসজ্জিত করে এ জাদুঘরের রূপ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উদ্যোগে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনগাঁথা ছড়িয়ে দিতে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের সূচনা। গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘরের উদ্বোধন করা হয়। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ জাদুঘর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগস্টের প্রথম দিন থেকে দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে রেলের দুটি ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর। সেই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে কুমিল্লা স্টেশনে আসে ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। কুমিল্লার মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে জাদুঘরটি।
জাদুঘরটিতে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, জীবনকাল আর সংগ্রামী ইতিহাস সংবলিত ভিডিও প্রদর্শন করা হচ্ছে, অডিও সিস্টেমে সম্প্রচার করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ।
জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পৈতৃক বাড়ির ছবি, ব্যবহৃত চশমা, দলের প্রতীক নৌকা, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় তামাক পাইপ ও মুজিব কোট। এছাড়া মুজিব শতবর্ষের লোগো, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই, মুজিবনগর স্মৃতিস্তম্ভ, পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধের রেপ্লিকাও রয়েছে। এ জাদুঘরে ১৯২০-১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ১২টি গ্যালারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
জাদুঘরটিতে আরো রয়েছে জয়বাংলা স্লোগানের আদলে তৈরি করা সৃজনশীল একটি বুক শেলফ। সেখানে শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়া চীন’সহ তার কর্মজীবনের ওপর রচিত গুরুত্বপূর্ণ বই। রয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’। ‘জয় বাংলা বুক শেলফে ৮০-১০০টি বইয়ের মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধুর ওপর রচিত বিভিন্ন লেখকের বই।
কুমিল্লা স্টেশনে আসার পর থেকেই জাদুঘরটি দেখতে ভিড় জমান নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নানা বয়সি দর্শনার্থী। ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেখতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী কাউসার হোসেন বাসসকে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির জনক। এ জাদুঘরের মাধ্যমে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নানা দিক সম্পর্কে জানতে পারছি।
স্কুল শিক্ষিকা ফৌরদৌসী আক্তার বলেন, ইচ্ছা থাকলেও আমাদের নানা ব্যস্ততার কারণে জাদুঘরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানা হয়ে ওঠে না। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ এ জাদুঘর মানুষের কাছে চলে আসায় এসব ইতিহাস সহজে জানতে পারছে সবাই।
জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে থাকা রেলের অ্যাটেনডেন্ট সোহাগ আহমেদ বাসসকে জানান, ১ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে এ ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর যাত্রা শুরু করে। পাহাড়তলী রেলস্টেশন, সীতাকুন্ড, ফেনী রেলস্টেশন, লাকসাম, মাইজদী, নোয়াখালী চৌমুহনী ও চাঁদপুর ঘুরে জাদুঘরটি কুমিল্লায় এসেছে। কুমিল্লার পর গন্তব্য আখাউড়া। তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান সম্পর্কে তৃণমূলের মানুষকে জানানোর জন্য রেলের এ উদ্যোগ সাড়া জাগিয়েছে।
পাঠকের মতামত